দ্বীপকন্ঠ নিউজ ডেস্কঃ
বাংলাদেশের রেলখাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি কোম্পানি। ১০ বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তিন ধাপে তারা ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) দেয়া ওই প্রস্তাবে প্রথম ধাপে কনটেইনার পরিবহন ও অন্যান্য মালপত্র পরিবহনে বরিশালের পায়রাবন্দর থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ডাবল ট্র্যাক বৈদ্যুতিক রেললাইন নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা। প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ হবে নতুন পদ্মা সেতু থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মাতারবাড়ী বন্দর পর্যন্ত উচ্চগতির প্যাসেঞ্জার রেল। আর প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্যাসেঞ্জার রেলের সম্প্রসারণ করা হবে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ধরনের প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাইয়ে অনেক তথ্য প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগ প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে আছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো যত দ্রুত করা যায় ততই ভালো। দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে প্রকল্পটি বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে বলে আমরা মনে করছি।
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বিনিয়োগের বিষয়টি ইআরডি দেখে। বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে পিপিপি নীতিমালা করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর চীন থেকে ফিরে আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম, নতুন যে রেলপথগুলো হবে সেগুলোতে ইলেকট্রিক ট্রাকশন রাখা যায় কিনা। তাতে অনেক টাকা লাগে। বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন। প্রয়োজন আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল সংযোগের। উপরের ক্যাবল ঝড়-বৃষ্টিতে নিরাপদ নয়।
তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক ট্রেন চালাতে গেলে এগুলোর সবই প্রয়োজন হবে। রেলমন্ত্রী বলেন, পিপিপি নীতিমালায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছি। এতে সাড়াও মিলছে। সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা প্রস্তুত।
দেশের সব জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। রেলের নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ১৬০ কিলোমিটার বা দ্রুতগতির বৈদ্যুতিক রেলপথ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বৈদ্যুতিক রেলপথ অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি আইএম পাওয়ার।
বিভিন্ন মাধ্যম জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষার্ধে বাংলাদেশে ‘ইন্টিগ্রেটেড রেল অ্যান্ড এনার্জি প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব দেয় যুক্তরাজ্যের বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতের প্রতিষ্ঠান আইএম পাওয়ার পিএলসি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) দেয়া ওই প্রস্তাবে প্রথম ধাপে কনটেইনার পরিবহন ও অন্যান্য মালপত্র পরিবহনে পায়রাবন্দর থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ডাবল ট্র্যাক বৈদ্যুতিক রেললাইন নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানিটি। তারা যুক্তরাজ্যসহ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বৈদ্যুতিক রেললাইন পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিডা সূত্র জানায়, চার বছর মেয়দি প্রথম ধাপটি সম্পন্নে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ হবে নতুন পদ্মা সেতু থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মাতারবাড়ী বন্দর পর্যন্ত উচ্চগতির প্যাসেঞ্জার রেল। দ্বিতীয় ধাপে অর্থায়ন প্রয়োজন হবে ৬ বিলিয়ন ডলার। আর প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্যাসেঞ্জার রেলের সম্প্রসারণ। তৃতীয় ধাপ সম্পন্নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এছাড়া রেলওয়ে ট্র্যাক বরাবর বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সব মিলিয়ে ১১ দশমিক ৭ বা প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
