জাহিদ দুলাল, লালমোহন
কারো অপেক্ষা স্বামীর জন্য, কারো অপেক্ষা সন্তানের জন্য আবার কারো বা বাবার জন্য। এমন করেই প্রিয়জনের ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনরা। কিন্তু নিখোঁজের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো খোঁজ না পেয়ে জেলে পরিবারে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন ২১ জেলে। ঘটনার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও ওইসব জেলেদের কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না স্বজনরা। নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে ভোলার লালমোহনের পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের ৪ জন এবং চরফ্যাশনের ১৭ জন। নিখোঁজ এসব জেলেরা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন তা নিয়েও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা জানান, গত ২০ অক্টোবর চরফ্যাশনের নুরাবাদ গ্রামের সৈয়দ মাঝির ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যান ২২ জেলে। এরপর ২৪ অক্টোবর সকালের দিকে ঝড়ের কবলে পড়ে ওই মাছ ধরার ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় একজন উদ্ধার হলেও নিখোঁজ রয়েছেন আরো ২১ জেলে।
এরপর থেকে ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এসব জেলেদের কোনো সন্ধান মিলেনি। নিখোঁজদের না পেয়ে পরিবারে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। তারা বেঁচে আছেন নাকি সাগরের অথৈ জলে সলিল সমাধি হয়েছে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যরা। তবে তারা জীবিত ফিরে আসবে এমন আশা স্বজনদের।
লালমোহনের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের নিখোঁজ জেলে বাবুলের মা শাহিনুর বেগম বলেন, শুনেছি আমার ছেলে যে ট্রলারে করে মাছ ধরতে গেছে সেটি ডুবে গেছে। এখনো তার কোনো খোঁজ পাইনি। তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কে দেখবে?
একই গ্রামের নিখোঁজ জেলে ইব্রাহিমের স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম স্বামীর চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতো সে (ইব্রাহিম)। কাজ না থাকায় প্রথমবারের মত সাগরে মাছ শিকারে যায়, কিন্তু ঝড়ের দিন তাদের ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলার ডুবির পর থেকে তাকে ফোনে পাচ্ছিনা। মাছ ধরতে যাওয়ার আগে বলেছিলো; কিছু টাকা দেনা আছি, ফিরে এসে সেই দেনা শোধ করবো, তোমরা চিন্তা করোনা। স্বামী সেই যে গেল আর ফিরে আসেনি। এখন ২ ছেলে ও এক মেয়েকে কে দেখবে। কে সংসার চালাবে।
এদিকে ট্রলার ডুবির ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ জেলে পরিবারের কেউ খবর নেয়নি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে জেলে পরিবারগুলোতে চলছে আর্তনাদ। নিখোঁজ এসব জেলেদের উদ্ধারের দাবী স্বজনদের।
এব্যাপারে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-নোমান বলেন, ট্রলার ডুবির ঘটনা শুনে আমরা তাদের সন্ধানের জন্য মৎস্যবিভাগসহ বিভিন্ন স্পটে খোঁজ নিয়েছি। নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে প্রশাসন। তাদের সন্ধান পাওয়া গেলে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।