1. admin@dipkanthonews24.com : admin :
পটুয়াখালী সদর থানার ওসি ধর্ষণের ঘটনা রফাদফা করলেন নিজেই! - দ্বীপকন্ঠ নিউজ ২৪
শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি ধর্ষণের ঘটনা রফাদফা করলেন নিজেই!

আবদুল আলীম খান, পটুয়াখালী
  • প্রকাশিত : বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩
  • ৫৩ বার পঠিত

পটুয়াখালীতে ধর্ষনের ঘটনা রফাদফা করলেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোঃ মনিরুজ্জামান। প্রতিবেশি জবেদ শিকারের কাছে ধর্ষনের শিকার হয় বৃদ্ধা হাছেন বানুর স্কুল পড়ুয়া ১২ বছরের শিশু কন্যা। ঘটনায় দুই ঘন্টার মাথায় পটুয়াখালী সদর থানায় উপস্থিত হয়ে থানা পুলিশকে জানান বিষয়টি। এসময় ওসির কক্ষে ঢুকে থানার অফিচার্জ ইনর্চাজ মনিরুজ্জামাকে ঘটনার চুলচেরা বর্ননা দিয়েছেন তারা। কিন্তু কোন ভাবেই মা-মেয়ে ওসিকে বিশ্বাস করাতে পারেনি যে ধর্ষন হয়েছে। যতবার ধর্ষনের ঘটনা ওসিকে বোঝাতে চেয়েছেন-ততবার মিথ্যা ও সাজানো বলে মা-মেয়েকে শাসিয়েছেন ওসি। পরে নারী-শিশু হেল্প ডেক্সে থেকেও একই আচরন পেয়েছেন তারা। এঘটনায় আটক করা হয় অভিযুক্ত জবেদ শিকদারকে। ভিকটিমকে মেডিকেল পরীক্ষা ছারায় বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়েছেন পুলিশ। ওইদিন রাতে থানার গোলঘরে পুলিশ-অভিযুক্তদের মধ্যস্থতার চাপের পরেন ভিকটিম পরিবার। শেষমেশ কোন মহলের সহযোগীতা না পেয়ে গভীর রাতে বাড়ী ফেরেন পরিবারটি। সাংবাদিকদের এমন বক্তব্য দিয়েছেন ভিকটিম পরিবার। পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের কুড়ালিয়া গ্রামে এমন ঘটনায় এলাকাবাসীও হতবম্ভ।

ভিকটিমের বৃদ্ধা মা বলেন-গত ১১ মে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিতে তার শিশু কন্যা(ভিকটিম) মৌসুমী ফল কুড়াতে প্রতিবেশি ৭০ বছরের জবেদ শিকদারের বাড়ীর বাগানে যান। বাগান থেকে বেশ কিছু ফল সংগ্রহ করেন ভিকটিম। ফল গুলো নিতে জবেদ শিকদার ভিকটিমকে ব্যাগ দেয়ার কথা বলে ঘরে ডেকে নেন। ব্যাগ পাওয়ার আশায় ভিকটিম ঘরে ঢুকলে জবেদ শিকদার দরজা বন্ধ করে ধস্তাধস্তির এক পর্যায় ভিকটিমের সঙ্গে অপকর্মে লিপ্ত হয়। এমন দৃশ্য দেখে জবেদ শিকদারের স্ত্রী সালেহা বেগম ভিকটিমকে মারধোর করেন। মারধোর থেকে রেহাই পেতে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘর থেকে বাহিরে বেড়িয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেন ভিকটিম। পরে ওই বাড়ীর এক গৃহবধুর কাছ থেকে কাপর নিয়ে বাড়ীতে ফিরে তার কাছে সব খুলে বলেন।
ভিকটিমের মা আরও বলেন-ঘটনার দিন সকালে ১০টার দিকে মেয়েকে নিয়ে সদর থানায় পৌছে ওসি সারের রুমে যাই। এসময় ওসির কাছে সব খুলে বলি। কিন্তু ওসি বলেন- তোমরা/তোরা মিথ্যা কথা বলো। জবেদ শিকদার আমার মেয়ের ক্ষতি করছেন,তা কোনো ভাবেই ওসিকে বিশ্বাস করাতে পারেনি। উল্টো ওসি আমাদের নানান ভাবে শাসিয়েছেন। মেয়েকে নিয়ে থানায় আসছি,এমন খবর শুনে গ্রামের অনেক মানুষ এবং জবেদ শিকদারের ছেলেরা থানায় এসে আমাদের অভিযোগ দিতে বাধা দেন। এসময় আমি পুলিশ ও গ্রামের মানুষদের ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষার দাবি করি। এতে তারা ভয় পেয়ে বলেন-এতে তোমার মেয়ের বদনাম ও ভবিষ্যত নিয়ে ঝামেলা হবে। জবেদ শিকদারের ছেলেরা তোমাকে ক্ষতিপূরন দেবে, ঝামেলা করার দরকার নাই। ১১ মে সকাল ১০ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত থানায় ছিলাম, কেউ সহযোগীতা করেনি। উল্টো পুলিশের বকাবকি খেয়েছি। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়ী আসি। পরদিন ক্ষতিপূরন বাবদ আমাকে ৮শ দিতে আসেন জবেদ শিকদারের ছেলে, আমি তা রাখেনি। তৃতীয় মাত্রা কে একই বক্তব্য দিয়েছেন ভিকটিম শিশুটি।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আব্দুল হাই বলেন-ঘটনা শুনে আমি ও চেয়াম্যান সাহেব দুপুরে থানায় যাই। থানায় পৌছে চেয়াম্যান সাহেব ওসিকে যথাযথ ব্যবস্থা ও ভিকটিমকে আইনী সহায়তা দিতে অনুরোধ করে চলে আসেন। একই কথা বলেছেন-মাদারবুনিয়ার ইউপি চেয়াম্যান আমীনুল ইসলাম মাসুম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাড়ীর এক ব্যক্তি ও এলাকাবাসী তৃতীয় মাত্রা কে বলেন-ঘটনার দিন আপত্তিকর অবস্থায় জবেদ শিকদারের স্ত্রী মো. সালেহা বেগম ভিকটিমকে পেটায়। পেটানি খেয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘরে থেকে দৌড়ে অন্য ঘরে আশ্রয় নেন ভিকটিম। পরে এক গৃহবধুর কাছ থেকে কাপর নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিজ বাড়ীতে যান। ওই সুত্রটি আরও বলেন-ভিকটিমের বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ্য। বৃদ্ধা মায়ের ভিক্ষাতে সংসার ও মেয়ের লেখা-পড়া চলে। ভিকটিম ৭৫ নং কুড়ালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। রাস্তার পাশে ঝুপড়ি তুলে বসবাস করেন তারা। অতিদারিদ্র হওয়াতে তাদের পক্ষে কেউ নেই। এখানে মোটা অংকের দেনদরবার হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কমল দত্ত এবং জাহিদুল ইসলাম(সুপ্রীকোর্ট)বলেন-এ সংক্রান্ত ঘটনায় ভিকটিম পুলিশের কাছে গেলে দ্রুত মেডিকেল পরীক্ষা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এর ২০০ এর ২২ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ নারী শিশু ট্রাইব্যুনালে হাঝির করে জবানবন্ধি লিপিবদ্ধ করা বাধ্যতা মুলক। এখানে অন্য কোনো সুত্রকে প্রাধান্য দেয়ার সুযোগ নাই। অপর একটি সুত্র বলেন-ওই দিন মোটা টাকা রফাদফায় মা-মেয়ের কণ্ঠ রোধ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন পুলিশ ও ধর্ষক পরিবার গং। এসআই শিপন বলেন-অভিযোগের ভিত্তিতে জবেদ শিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নিয়ে আসি। তবে ঘটনা অসত্য বলে থানার গোলঘরে মিমাংসা হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানিনা।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন-তারা প্রথশত এক বয়স্ক লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। মেয়েটি পিসি/পিআর হলো সে বিভিন্ন বাড়ী ফল চুরি করতেন। ওইদিন ওই বাড়ীর কিছু আম পেরেছেন। তা নেয়ার জন্য একটি ব্যাগ দরকার। ব্যাগ নিতে মেয়েটি ওই ঘরে ঢুকলে ঘরের গৃহবধু তাকে চোর বলে শায়েস্তা করেন। মেয়েটি চুরির অপবাদ ঢাকতে এমন ঘটনা সাজিয়েছেন। ভিকটিমকে মেডিকেল পরীক্ষা করা যেত কিনা এমন প্রশ্নে ওসি বলেন-বয়স্ক লোকটা আনার পর দেখা গেলো-বিষয়টি এমন নয়, নারী পুলিশ দ্বারাও জিজ্ঞাসা করেছি, এমন আলামত পায়নি। যা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়াম্যানও জানেন।
এসকল বিষয়ে পটুয়াখালী সদর সার্কেলের অ্যাডিশনাল এসপি সাজেদুর ইসলামকে অবহিত করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন-বিষয়টি আমার জানা নাই। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করেছি। এসময় ভিকটিম পরিবারকে সর্বোচ্চ আইনী সহায়তা দেয়ার কথা বলেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো পড়ুন