মোঃ সানাউল্লাহ, বরগুনা
কাগজ কলমে ১৮ জন এতিম দেখানো হলেও বাস্তবে দেখা মিলেছে মাত্র দুইজনের। এদের মধ্যে প্রকৃত এতিম মাত্র একজন৷ এতিম না থাকায় এতিমদের জন্য দেয়া সরকারের লাখ লাখ টাকা যাচ্ছে অসাধুদের পকেটে। ফলে আত্মসাৎ হচ্ছে সরকারের লাখ লাখ টাকা।
এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে বরগুনায়। প্রতিষ্ঠানটির নাম হাজী ফকরউদ্দিন নেছারউদ্দিন শিশু সদন। এটি বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের কাজিরাবাদ এলাকায় অবস্থিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়েন কাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থিত হাজী ফকরউদ্দিন নেছারউদ্দিন শিশু সদনটি৷ এখানে ১৮ জনের জন্য ক্যাপিটেশন বরাদ্দ দিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। নিয়ম অনুযায়ী ১৮ জনের বরাদ্দ পেতে হলে ৩৬ জন এতিম থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে গোটা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে মাত্র দুজন, এদের মধ্যে একজন এতিম। শুধু এখানেই নয়, জেলার অধিকাংশ এতিমখানাতেই দেখা যায় এমন চিত্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় ক্যাপিটেশনপ্রাপ্ত হয়৷ চলতি অর্থবছরে ৩৬ জন এতিম রয়েছে বলে তালিকা দেয়া হয় সমাজসেবা অধিদপ্তরে। এর অনুকূলে ১৮ জনের ক্যাপিটেশন পায় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি ৬ মাসে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে এখানে। তবে মাত্র দুজন ছাত্র থাকার পরেও ২-৩ দিন আগে ১৮ জনের বরাদ্ধের টাকা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব বিষয় নিয়ে যাতে সংবাদ প্রচার না হয় সেজন্য এতিমখানা কতৃপক্ষ সাংবাদিকদের ঘুষের প্রস্তাব দেয়।
এছাড়াও অনেকগুলো এতিমখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রকৃত এতিম নেই। আবার যাদের নামের তালিকা যাচ্ছে সমাজসেবায় তারাও প্রতিষ্ঠানে নেই। ভুয়া নাম ব্যবহার করে চলছে এতিমের বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের পাল্লা। আবার যেসকল প্রতিষ্ঠানে এতিমের সংখ্যা বেশি রয়েছে সে সকল প্রতিষ্ঠানে সেই সংখ্যক এতিমের বরাদ্দ পাচ্ছে না। বরগুনা জেলায় জুলাই-২০২২ থেকে ডিসেম্বর-২০২২ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬০৯ জন এতিমের অনুকূলে ৫ কোটি ৫৩ লাখ ০৮ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
হাজী ফকরউদ্দিন নেছারউদ্দিন শিশু সদনের মাসুম ও হাসান নামে দুজন ছাত্র বলেন, আমরা ২০-২৫ জন ছিলাম৷ আমাদের হুজুর চলে যাওয়ায় তার সাথে অনেক ছাত্রই চলে গেছে৷ বাকি যারা ছিল তারা বাড়িতে গেছে ছুটি নিয়ে। এখন আমরা দুজন ছাত্র আর দুজন হুজুর আছি।
এতিমখানার দায়িত্বে থাকা মো. ইব্রাহিম বলেন, বরাদ্দের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবনা, এসব বিষয়ে সভাপতি বলতে পারবে। আমাদের হুজুর চলে যাওয়ায় অনেক ছাত্র চলে গিয়েছে। আবার অনেকে বাড়িতে আছে।
এরপর ঘুষের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, নিউজ করার দরকার নাই, অনেক সাংবাদিক এখনে আসে। আপনারা আপনাদের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যান৷ আপনাদের সাথে পরে দেখা করব।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় এতিমদের তুলনায় এতিমখানা বেশি৷ সেক্ষেত্রে যেসকল এতিমখানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক এতিম নেই সে সকল এতিমখানায় যাতে বিল না দেয়া হয় সেজন্য আমার কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া আছে এবং মৌখিক ভাবেও বলা আছে।
তিনি বলেন, কাজিরাবাদের এতিমখানাটি আমি পরিদর্শন করব, সেখানে কোন এতিম না পাওয়া গেলে পরবর্তী বিল বাতিল করা হবে। এবং এতিম না থাকার পরেও কিভাবে চলতি ছয়মাসে বিল দেয়া হল সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কার্যালয়ের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বরগুনা জেলায় ১২০ টির মতো এতিমখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই তালিকা অনুযায়ী এতিম নেই। কোথাও কোথাও এতিম থাকলেও মাসিক বেতন দিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। অথচ এসব এতিমদের তালিকা দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।