পর্যটন অপার সম্ভবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ নীলাভুমি মনপুরা। চারপাশে মেঘনানদী দ্বারা বেষ্টিত । পাখির কলকাকলিতে মুখরিত সবুজ শ্যামলে ঘেরা এই দ্বীপ উপজেলা। ভোলার মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে সৌন্দর্যের অনেক কিছু লুকায়িত আছে। এই দ্বীপে না আসলে বুঝাই যাবেনা সৌন্দর্যের এই দ্বীপে কি লুকায়িত আছে। এই দ্বীপের আশে পাশে ১০/১২টি ছোট ছোট চর আছে। চরে সারি সারি কেওড়া বাগান। দ্বীপ উপজেলার মুল ভুখন্ডেও দেখতে পাওয়া যায় হরিণের পাল। পর্যটকদের আকর্ষনীয় করার মত বহু উপকরন রয়েছে এই দ্বীপে। এই দ্বীপে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু চিন্তানিবাস স্থাপনের কাজ ও শুরু হয়েছিল। আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর মহাপ্রলয়নকারী ঘূর্ণীঝড় ও বন্যার আঘাতে লন্ড ভন্ড হয়ে যাওয়া মনপুরায় গরীব অসহায় সাধারন মানুষের পাশে ত্রান নিয়ে বন্যার পরবর্তী সময় এসেছিলেন। তিনি নিজ হাতে ত্রান বিতরন করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নীলাভ’মি রুপালী দ্বীপের সহজ সরল মানুষের ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে তিনি মনপুরাকে ভালবেসে ফেলেছেন। চর্তুদিকে মেঘনা নদী বেষ্ঠিত সারি সারি কেওরাবাগান , পাখির কলকাকলিতে মুখরিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অভিরাম দৃশ্য দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। সৌন্দর্যের এই আভাস ভ’মিকে নিজের মনের মত গড়তে চেয়েছেন। তাই তিনি চিওবিনোদনের জন্য
অবকাশকালীন সময়ে শান্তির জন্য মনপুরাতে চিন্তানিবাস স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন। একটি চিন্তানিবাসের জন্য ইট,বালু,সিমেন্ট,রড পাঠিয়ে ছিলেন। কাজও শুরু হয়েছিল। চিন্তানিবাসের ভিওিপ্রস্তর রামনেওয়াজ বাজার সংলগ্ন বড় দীঘির পাশে স্থাপন করা হয়েছিল। সেই বিল্ডিং দীর্ঘদিন পর্যন্ত কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়েছিল। গত ৭/৮বছর পুর্বে মেঘনার তীব্র ভাঙ্গনে সেই নিদর্শন টি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সারা বছর কর্মব্যস্ততম সময় কাটার পর একটু সময় মুক্ত বাতাস ও কিছুটা সময় বিশ্রামে থাকার জন্য বঙ্গবন্ধু চিন্তানিবাস গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু জাতির জনকের সেই স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বর্ষেও আজও বাস্তবায়িত হয়নি। পর্যটনের অপার সম্ববনা লুকিয়ে আছে পুরানো এ দ্বীপে।
পর্যটক আর ভ্রমন পিপাসু মানুষ কে মুগ্ধতার বন্দনে আটকে দেওয়ার বহু উপকরন রয়েছে এ দ্বীপে । এখানে সকাল বেলা সুর্য যেমন হাঁসতে হাসঁতে পুর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায় তেমনি বিকেল বেলাতেও আকাশের সিড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্মিম আকাশে মুখ লুকায়। মনপুরাতে এসেই কেবল সুর্যদয় ও সুর্যাস্ত প্রতক্ষ করা যায় । মুল ভুখন্ডে দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণের পাল। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন চাই মনপুরাবাসী।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জনত্রেী শেখ হাসিনা তার পিতার সেই সোনার স্বপ্ন মনপুরাতে বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছেন মনপুরার লক্ষাধিক মানুষ ।
এব্যাপারে মনপুরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ লতিফ ভূঁইয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর ঘূর্ণীঝড় ও জলোচ্ছাসে লন্ড বন্ড হয়ে যাওয়া মনপুরায় সম্ভবত ৫দিন পর(১৭ই নভেম্বর মঙ্গলবার) লঞ্চ যোগে রামনেওয়াজ বাজারের উত্তরপাশ্বে খরুলার খাল পাড়( কাচারীর ডগি) ত্রান চাউল,ডাল,তৈল,শাড়ী,লুঙ্গি,কম্বল) নিয়ে এসেছেন। তখন আমি ছিলাম ভোলা কলেজের ছাত্র। মনপুরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর সফর সঙ্গি ছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা সাবেক শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি নুর আলম সিদ্দকী ও ডাকসুর ভিপি আ.সম. আব্দুরব । বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে ত্রান বিতরন করেন। মরহুম বসরতউল্যাহ চৌধুরী(সাহাজাদা মিয়া)কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের গায়ের মুজিব কোট এবং আমাকে তার গায়ের চাদর দিয়েছেন। তিনি উদার মনের মানুষ ছিলেন। মনপুরায় নির্জন এলাকা দেখে এবং মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে তিনি মনপুরায় একটি আবাসভুমি করার পরিকল্পনা করেছেন। এই আবাসভুমি মনপুরায় বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাসের রুপ নেয়। চিন্তানিবাসটি করার জন্য ইট,বালু,সিমেন্ট ও রড পাঠিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কাজও শুরু হয়েছিল। একতলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মান হয়েছে। অদৃশ্য কারনে আজও সেই কাজ আর হয়নি। সেই নিদর্শনটি এখন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এব্যাপারে মনপুরা উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহসভাপতি একেএম শাজজাহান মিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু বন্যার পরবর্তী সময় সম্ভবত ১৬/১৭ ই নভেম্বর মনপুরায় ত্রান নিয়ে লঞ্চযোগে রামনেওয়াজ খরুলার খাল পাড়(কাচারীর ডগি)তে এসেছেন। তখন আমি ছিলাম চরফ্যাশন ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক। লঞ্চটি নদীর পাড়ে আসতে দেখে শত শত অসহায় মানুষ দৌড়ে লঞ্চটির কাছে গেলেন। বঙ্গবন্ধু তখন লঞ্চে ছিলেন। তিনি মরহুম বসরতউল্যাহ চৌধুরীকে(সাহাজাদা মিয়া) ব্যাক্তিগতভাবে চিনতেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বসরত উল্যাহ চৌধুরীকে জড়িয়ে দড়ে তার গায়ের মুজিব কোটটি বসরতউল্যাহ চৌদুরীকে দিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লঞ্চে থেকে ত্রান সামগ্রী বিতরন করেন। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা ছিল বিচ্ছিন্ন এই নির্জন দ্বীপে একটি আবাসভবন করার। পরবর্তিতে এটির নাম করন করা হয় বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস। ভবনের কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই ভবন দীর্ঘদিন কালের সাক্ষি হিসেবে দাড়িয়ে ছিল। ভবনটি আজ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একেএম শাহজাহান মিয়া আরও বলেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ বেতারের আঞ্চলিক মহাপরিচালক এম.আর আক্তার মুকুল (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরম পত্র খ্যাত )একটি বইতে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদিন আওয়ামীলীগের সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন , আমি লুঙ্গি ,গামছা নিয়ে নির্জন ভুমি মনপুরায় চলে যাবো। এতে বুঝা যায় বঙ্গবন্ধু মনপুরার মানুষকে মনে প্রানে ভালোবেসে ফেলেছেন। কিন্তু তার স্বপ্ন আজও পুরন হয়নি।
মনপুরা উপজেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন মিয়া বলেন, মনপুরা পর্যটন অপার সম্ভবনাময় । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নীলাভুমি এই মনপুরা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ভোলা-৪, আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্য্কাব এমপি মনপুরাকে পর্যটননগরী ও বঙ্গবন্ধু চিন্তানিবাস স্থাপনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। । আশা করি তা বাস্তবায়িত হবে।
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস স্থাপনের বিষয় সবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা গত ১৬ই জানুয়ারী বাংলাদেশ টোরিজম বোর্ডের সাথে অনলাইন সভায় সর্বপ্রথম প্রস্তাব দিয়েছেন। চিন্তানিবাস স্থাপনের বিষয় টোরিজম বোর্ড, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহায়তা চাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক প্রস্তাবপত্র(ধারনা পত্র) তৈরি করা হয়েছে। মহান জাতীয় সংসদে এই ধারনা পত্রটি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ভোলা-৪, আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্য্কাব এমপি সংসদে উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষন করলে কাজের গতি ত্বরান্বিত হবে। বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাসের জায়গা নির্ধারনের জন্য জমির প্রস্তাব দেওয়ার কাজ চলমান। বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস বাস্তবায়ন হলেই মনপুরা হবে পর্যটকদের আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জায়গা ।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন , সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর“ স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস ” গড়ার তা আমাদের এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব চিন্তানিবাস গড়ার সকল কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি দ্রæত বাস্তবায়িত হবে।
এ ব্যাপারে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপত্বি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি বলেন জাতির জনকের স্বপ্ন দ্রুত বস্তবায়নের জন্য আমি ইতি মধ্যে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি বাস্তবায়িত হবে।