শাশুড়ি এবং স্বামী মিলে মিম কে পুড়িয়ে হত্যা করতে চায়, এমন একটি ঘটনা সাজাতেই চাচাতো বোনের স্বামীর সহযোগীতায় নিজের হাত-পা বেধে ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনা সাজিয়েছিল হালিমা আক্তার মিম।
তবে আগুন নিয়ন্ত্রনের বাহিরে গেলে পরিকল্পনার ছন্দ পতন ধরে এবং অগ্নিদগ্ধ হন মিম আর পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মিমের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগীতা করে মিমের চাচাতো বোনের স্বামী আরিফ হোসেন সিকদার। মঙ্গলবার সকালে পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম প্রেসব্রিফিং এ মিম হত্যাকান্ডের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এমন তথ্য জানান। এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পুলিশ মো: আরিফ হোসেন সিকদার (৩০) কে আটক করে।
সোমবার আরিফ হোসেন সিকদার পটুয়াখালী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারউক্তি মুলক জবানবন্দি দেন। আরিফ দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের কার্তিকপাশা গ্রামের হামেদ সিকদারের ছেলে।
পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে নিজের শাশুড়ি ও স্বামীকে উচিত শিক্ষ দিতেই চাচতো বোনে স্বামীকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন হালিমা আক্তার মিম। সে অনুযায়ী আগে থেকেই চাচাতো দুলাভাই মো: আরিফ হোসেন সিকদারকে সাথে তার যোগাযোগ হয়। ঘটনার দিন সকালে আরিফ ঢাকা থেকে দুমকি আসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের মধ্যে কেরোসিন দিয়ে মিমের পরিকল্পনা অনুয়ায়ী তাকে তার হাত পা বেধে দেয়া হয়। মিম ঘরের এক কোনে মশারিতে আগুন দিয়ে আরিফ কে ঘরের বাহির থেকে দরজার সিটকানী দিয়ে বন্ধ করে চলে যেতে বলে। মিমের সে পরিকল্পানেই অনুযায়ী সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছিল তবে পরিকল্পনা ছিল আগুন গায়ে লাগার আগেই মিম ডাক চিৎকার দেয় এবং আশ পাশের মানুষ তাকে উদ্ধার করবে। তবে আশ পাশের মানুষ আসতে দেরি করা আগুনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মিম অনেক বেশি অগ্নিদগ্ধ হয়। অপরদিকে মিমের শিশু সন্তানটি যাতে নিরাপদ থাকে সে কারনে ঘরের সামনের খাটে ছয় মাসের সন্তান কে রাখা হয়। এদিকে মিমকে যখন প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে সে সময়ও মিম তার পরিকল্পা অনুযায়ী বলছিন একজন মহিলা বোরকা পরা এবং একজন পুরুষ তার শরীরে কেরোসিন দিয়ে আগুন দিয়েছে। মিমের পরিকল্পনা ছিল তার শাশুড়ি এবং স্বামী তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চাচ্ছে এমন একটি বিষয় প্রমান করবেন। সে কারনেই ঘটনার পর তার শাশুড়ি একমাত্র শত্রু বলেও বক্তব্য দেন। ওই ঘটনার পর পরই মিমের শাশুড়িকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরন করেছে।
উল্লেখ্য পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা সাতানী গ্রামের বাসিন্দা প্রিন্স ও সুমি আক্তার দম্পতি চলতি উপজেলা সদরের শাহজাহান দারোগার বাসায় ভাড়া থাকতেন। গত ৮ জুন দুপুরে মুখোশধারী দুই দূর্বৃত্ত হঠাৎ ঘরে ঢুকে গৃহবধূ সুমির হাত-পা বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে ঘরের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায় বলে দাবী করেছিলে হালিমা আক্তর মিম। এ সময় মিমের চিৎকার শুনে আশপাশের বাসিন্দারা এগিয়ে এসে মিমকে উদ্ধার করে। মিমকে প্রথমে বরিশাল এবং পরে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে মিমের মৃত্যু হয়।