1. admin@dipkanthonews24.com : admin :
মনপুরা ঘর থেকে তুলে নিয়ে শিক্ষককে নির্যাতন - দ্বীপকন্ঠ নিউজ ২৪
শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
তালতলীতে লাইফবয়া বিতরণী কার্যক্রম পরিদর্শন পটুয়াখালী -২ আসনে ৪ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা মনপুরায় মোকাদ্দেছা-কাশেম ফাউন্ডেশন কর্তৃক মেধাবৃত্তি প্রদান বরগুনায় কুকুর হত্যার অভিযোগে তিনজনের নামে আদালতে মামলা এমপি শাওনকে বরন করতে নাগরিক সংবর্ধনায় জনতার ঢল বোরহানউদ্দিনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে মানুষের ঢল লালমোহনে এমপি শাওনকে নাগরিক সংবর্ধনা সন্তানরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জাতীর কল্যাণে এগিয়ে আসবে- অধ্যক্ষ আবুল হাশেম মহাজন মনপুরায় মহান বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি মূলক সভা অনুষ্ঠিত উপকুলীয় এলাকায় দুর্যোগ সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

মনপুরা ঘর থেকে তুলে নিয়ে শিক্ষককে নির্যাতন

মোঃ ছালাহউদ্দিন, মনপুরা
  • প্রকাশিত : শনিবার, ২৪ জুন, ২০২৩
  • ১২৩ বার পঠিত

ভোলার মনপুরায় ৫-৭ টি মোটরসাইকেলে একদল দুর্বৃত্তরা লজিং বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হিন্দু ধর্মীয় এক শিক্ষককে পাশবিক কায়দায় নির্যাতন চালায় একদল দুর্বৃত্তরা। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ওই শিক্ষক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে জ্ঞান ফিরলে সন্ত্রীসারা জোর করে ওই শিক্ষকের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে ভিডিও ধারন করে।

শুক্রবার রাত আনুমানিক ১২ টায় উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সিরাজগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ পাশে করাত মেইলের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে রাতেই উপজেলার ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল ও সাকুচিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জামাল উদ্দিন ওই শিক্ষককে উদ্ধারে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এদিকে এই ঘটনায় শিক্ষক সমিতির নেতারা নিন্দার পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।

পরে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় ওই শিক্ষক বাদী হয়ে ৯ জনসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামী করে মনপুরা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এদিকে এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও শিক্ষক নির্যাতনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ওসি মোঃ জহিরুল ইসলাম।

নির্যাতনে আহত শিক্ষক হলেন, সুব্রত বালা। তিনি মনপুরার সাকুচিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসাবে কর্মরত। শিক্ষকের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর উপজেলার বহুগ্রাম ইউনিয়নে বহুগ্রাম গ্রামে। তিনি মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রতাপ চন্দ্র দাসের বাড়িতে লজিং টিচার হিসাবে থাকতো।

শিক্ষক নির্যাতনে অভিযুক্তরা হলেন, মোঃ সোহাগ বরদার (৩০), মোঃ মুরাদ হোসেন (২১), মোঃ রাহাত (১৮), মোঃ ফাহাদ (২০), মোঃ সুজন (২০), মোঃ শাকিব (২২), মোঃ ইমন (১৮), মোঃ জাহিদ (১৯), মোঃ আরিফ (২০) সহ অজ্ঞাত ৫-৬ জন। সকলের বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক নির্যাতন ঃ
গত ২১ জুন বুধবার সাকুচিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণীর ইংরেজী বিষয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় পরিদর্শক হিসাবে হলরুমে প্রবেশ করেন শিক্ষক সুব্রত বালা। পরে তিনি কয়েকজন পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইংরেজী গাইড ও বই উদ্ধার করে হলরুমের মেঝেতে রাখে। পরীক্ষার শেষে পরীক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ইসলাম ধর্ম বই মেঝেতে রেখে অবমাননার অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ দেয়। তাৎক্ষনিক প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন ওই শিক্ষককে ডেকে স্কুলের সকল শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের সামনে ঘটনা জানতে চান। তখন অভিযুক্ত শিক্ষক সুব্রত বালা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইংরেজী বই ও গাইড উদ্ধার করে মেঝেতে রেখেছেন বলে জানায়। সেখানে ইসলাম ধর্ম বই ছিল না বলে তিনি জানান। তারপরও শিক্ষার্থীদের চাপের কারনে এক পর্যায়ে ওই শিক্ষক স্কুলের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ক্ষমা চান। তখন প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তখন ঘটনাটি মিটমাট হয়ে যায়।

কিন্তু ওই দিন বিকালে ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও ইমাম সমাজ ঘটনা জানতে পারলে ঘটনার রুপ পাল্টাতে থাকে। ওই দিন সন্ধ্যায় ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও ইমাম সমাজ ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ইসলাম ধর্ম বই অবমাননা করার অভিযোগ তুলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজলের কাছে বিচার দাবী করেন। পরে চেয়ারম্যান সকলের মতামত নিয়ে ২৪ জুন শনিবার বিকেলে স্কুলে অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে বসার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বসার একদিন পূর্বেই শুক্রবার রাতে ওই শিক্ষককে লজিং বাড়ি থেকে ফ্লিম স্টাইলে তুলে করাত মিলে নিয়ে পাশবিক কায়দায় নির্যাতন চালায় দুর্বৃত্তরা।

শিক্ষক সুব্রতা বালা জানান, শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টা থেকে ১২ টার মধ্যে ৫-৭ টি মোটর সাইকেলে ১৫-১৬ জন এসেছে আমাকে লজিং বাড়ি থেকে তুলে নেয়। পরে ওরা সিরাজগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ পাশে করাত মেইলে নিয়ে গিয়ে লাকড়ী ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। মারধরের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি একটি দোকানে। সেখানে আমার কাছ থেকে ইসলাম ধর্ম বই অবমাননা করি এর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে ভিডিও ধারন করে। পরে চেয়ারম্যান ও আমার প্রধান শিক্ষক আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় থানায় লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে মামলার আবেদন করি।

এই ব্যাপারে সাকুচিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, শুক্রবার রাতে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক সুব্রতা বালাকে উদ্ধারে করে হাসাতালে ভর্তি করি। তিনি আরও জানান, গত বুধবার ওই শিক্ষক ভোকেশনাল শাখার ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষার পরিদর্শক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। পরীক্ষার শেষে পরীক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম বই মেঝেতে ফেলে অবমাননা অভিযোগ তোলে। পরে স্কুলের সকল শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষক সুব্রতা বালাকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ইসলাম ধর্ম বই মেঝেতে রাখেনি বরং পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইংরেজী বই ও গাইড উদ্ধার করে মেঝে তে রেখেছে বলে জানায়। পরে তিনি তার অনিচ্ছকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চান। আমিও ওই শিক্ষকের হয়ে সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করি।

এই ব্যাপারে মনপুরা ইসলামী আন্দোলনের মনপুরা উপজেলা সভাপতি হাফেজ আবদুল মতিন জানান, ইসলাম ধর্ম বই অবমাননার বিষয়ে জানতে পেরে আমার কয়েকজন চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দাবী করি। শনিবার বিকেলে ওই শিক্ষককে নিয়ে বসার তারিখ ঠিক হয়। কিন্তু শুক্রবার রাতে ওই শিক্ষককে যারা নির্যাতন করেছে তাদের বিচার দাবী ও ঘটনার নিন্দা জানান তিনি।

এই ব্যাপারে মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক অলি উল্লা কাজল জানান, ইসলামী আন্দোলনের নেতারা সহ আলেমরা ইসলাম ধর্ম বই অবমাননা করায় শিক্ষককের বিচার দাবী করে। পরে শনিবার বিকেলে ঘটনার বিষয়ে ওই শিক্ষককে নিয়ে বসার দিন সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে ওই শিক্ষককে লজিং বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে আহত অবস্থায় ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষক সমিতির নেতা আলমগীর হোসেনসহ একাধিক নেতারা জানান, শিক্ষককে এইভাবে তুলে নিয়ে যারা পাশবিক কায়দায় নির্যাতন করেছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবী করেন।

এই ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, শিক্ষককে তুলে নিয়ে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম বই অবমাননা ও শিক্ষক নির্যাতনের বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে পুলিশ তদন্ত করছে। আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো পড়ুন
error: Content is protected !!