দেশের খাদ্য ও শিল্পে ব্যবহার্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল আখ। চিনি, গুড় ও চিবিয়ে খাওয়ার জন্য আখ চাষ করা হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ন্যায্য দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তজুমদ্দিন উপজেলা
কৃষক অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর চলতি মৌসুমে উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে। সোনাপুর ইউনিয়ন ২ হেক্টর, চাঁদপুর ইউনিয়ন ১২ হেক্টর, চাঁচড়া ইউনিয়ন ৭ হেক্টর, শম্ভুপুর ইউনিয়ন ১১ হেক্টর, মোট আখ চাষ আবাদ হয়েছে ৩২ হেক্টর জমিতে যা লক্ষমাত্রার চেয়েও বেশি। আখ চাষে তুলনামূলকভাবে লাভ বেশি হওয়ায় অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি আখ চাষ করছেন কৃষকরা। আখ চাষি ছেলামত বলেন, আমাদের আখের বাজারজাত নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয় না। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জমি থেকে কিনে নেন যান। জমি কেনার পদ্ধতিও চমৎকার। প্রথমে কৃষকের কাছ থেকে একদল পাইকার দামদর করে শতাংশ হারে ক্রয় করেন।
পরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জমি থেকে আখ কেটে বাজারে বিক্রি করেন। জমি থেকে প্রকারভেদে আখ পাইকারী দরে ১০০ আখ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। কয়েকজন কৃষক জানান, ভালো মানের আখ জমি থেকেই ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারেরা। একবার আখ লাগালে তিন বছর ফলন পাওয়া যায়। গোঁড়া থেকে আখ কেটে নিলে অবশিষ্টাংশ থেকে আবার জন্মায়। তা ছাড়া বিক্রির সময় কেটে রাখা আখগাছের আগা থেকেও চারা উৎপাদন করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ পাচ্ছেন তাঁরা। বেশ কয়েক বছর জমিতে আখ চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন চাঁচড়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের দিগলা কান্দি গ্রামের কৃষক কামাল উদ্দিন তিনি বলেন, এ বছর তিনি ২৬ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন। ২৬ শতাংশ জমিতে পরিচর্যা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আখ বিক্রি করতে পারবো প্রায় ৯০ হাজার টাকার মত।
এতে আয় হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। আমার এই আয় ও সফলতা দেখে এলাকার অনেক কৃষক আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। চাঁদপুর ইউনিয়নের আখ চাষি সুমন জানান, আমি এবছর ২৪ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করি, এতে খরচের চেয়ে দীগুন লাভ হবে বলে মনে করি। আখ চাষে খরচ এবং পোকামাকরের আক্রমণ কম হয়। এ কারণে আখের ফলনও ভালো হয়। এ ছাড়া মাটির গুণাগুণ ভালো থাকায় এখানকার আখ মিষ্টি হয়। তজুমদ্দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, এই উপজেলায় অন্যান্য ফল ও ফসলের পাশাপাশি দিনে দিনে আখের চাষ বাড়ছে। লাভজনক ফসল হওয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই আখ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এ বছর উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। অনেক কৃষক আগামী বছর আখ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে চাষিরা যেন তাদের ফসল বাঁচাতে পারে সে জন্য যথাসময়ে কৃষি অফিসের মাধ্যমে সঠিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে।