মাহমুদ লিটন , লালমোহন
সাগর-নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকারে যেতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন জেলেরা। মেঘনার তীরবর্তী জেলে পল্লীতে আনন্দেও বন্যা । রাত থেকে সাগর-নদীতে নামবেন জেলেরা। মাছ শিকারে যাওয়ার প্রস্তুতিকে ঘিরে ভোলার লালমোহন উপজেলার মৎস্যঘাটগুলোতে জেলেদের যেন উৎসব চলছে। সকাল থেকেই জেলেরা নৌকা-ট্রলার ও জাল প্রস্তুত করছেন।
উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের বাত্তিরখাল মৎস্যঘাটের জেলে মো. হোসেন জানান, আমরা সরকার ঘোষিত মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন করেছি। এ নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন ছিলাম। এতে করে সংসার চালাতে ধার-দেনা করতে হয়েছে। ২২ দিনে অন্তত ১৮ হাজার টাকার মতো দেনা করেছি। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নদী-সাগরে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। রাতেই নদীতে নামবো মাছ শিকারে। আশা করছি নদীতে ভালো মাছ মিলবে। ভালো মাছ পেলে দেনাসহ অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
একই মৎস্যঘাটের জেলে আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, সংসারে স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আমরা সুন্দরভাবে পালন করেছি। এ জন্য কর্মহীন থাকতে হয়েছে। যার জন্য সংসার চালাতে গিয়ে অন্তত ১৫ হাজার টাকার মতো দেনা হয়েছি। এ ছাড়া এনজিওর ঋণ রয়েছে দেড় লাখ টাকা। আশা করছি এখন নদী-সাগরে ভালো মাছ পাবো। আর ভালো মাছ পেলেই দেনার টাকা পরিশোধ করে সুন্দরভাবে সংসার চালাতে পারবো।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, লালমোহন উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২৪ হাজার ২৩৪ জন। যার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী ও সাগরে মাছ শিকার করেন। উপজেলার ছোট-বড় প্রায় ২৭ টি ঘাট থেকে এসব জেলেরা মাছ শিকার করতে নদী-সাগরে যান। মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ৮২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে ৯৯৫ কেজি ইলিশ জব্দ করে এতিমখানায় দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে অবৈধ ১ লাখ ৫৯ হাজার মিটার জাল। যার বাজার মূল্য ৩১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারে যাওয়ায় বেশ কয়েকজন জেলেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কারাদÐ প্রদান করা হয়েছে ৪৩ জন জেলেকে। অভিযানে নৌকা জব্দ করা হয় ৮টি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানভীর আহমেদ বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিলাম। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই জেলেরা মাছ শিকারে যেতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। মধ্যরাত থেকেই তারা মাছ শিকারে নামবেন। আশা করছি এখন জেলেরা নদী-সাগরে কাক্সিক্ষত ইলিশ পাবেন। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের কিছুটা কষ্ট হলেও কাক্সিক্ষত মাছ পাওয়ার মাধ্যমে তাদের সেই কষ্ট দূর হবে।