মাহমুদ লিটন, লালমোহন
২০১২ সালের জুলাই মাসে উদ্বোধন করা হয় ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্মিত ভবনের। এরপর থেকে একদিনের জন্যও সেখানে যাননি ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু। অব্যবহারিত থেকেই এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ভবনটি। আর ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম চালানো হয় একটি টিনের চাপড়ি ঘরে।
জানা যায়, ধলীগৌরনগর ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয় ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাউরিয়া এলাকায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৫০ টাকা ব্যয়ে ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়।
ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. লোকমান হোসেন বলেন, আমার বাড়ির সামনেই ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকে একদিনের জন্যও এই ইউনিয়ন পরিষদে আসেননি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম চালান ইউনিয়নের মঙ্গলসিকদার বাজারের একটি টিনের চাপড়ি ঘরে। এমন অবস্থায় সরকারের প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটি ইউনিয়নের মধ্যবর্তীস্থানে রয়েছে। তবে এখানে চেয়ারম্যান না আসায় সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় নষ্ট করে যেতে হয় মঙ্গলসিকদার বাজারে। ইউনিয়ন পরিষদের পুরনো ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ার কারণে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ সেই আগের জরাজীর্ণ পুরনো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনেই বিতরণ করা হয় সরকারি বিভিন্ন চাল। ইউনিয়ন পরিষদের আগের ভবনটি ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টুর নিজ এলাকায়। যার ফলে তিনি সেখানে চাল বিতরণ করেন। নিজের এলাকায় হওয়ায় চাল বিতরণে নানা অনিয়ম করছেন চেয়ারম্যান। আমরা এসবের প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। আমাদের দাবি নতুন ভবনটিতেই যেন শিগগিরই ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বাউরিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল আহাদ ও মো. নাজিম উদ্দিন জানান, জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের মঙ্গলসিকদার বাজারে যেতে হয়। এতে করে অতিরিক্ত টাকা ও সময় নষ্ট হয়। এখানের ভবনে চেয়ারম্যান আসলে হাজার হাজার মানুষের সুবিধা হতো। তাই আমাদের দাবি খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে যেন ইউনিয়ন পরিষদের এই ভবনে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ধলীগৌরনগর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব জহরলাল দাস বলেন, নতুন ভবনটিতে সত্যিই কোনো কার্যক্রম হয় না। নির্মাণের পর বেশ কয়েক বছর ধরে অব্যবহারিত পড়ে রয়েছে ভবনটি। চেয়ারম্যান সেখানে না যাওয়ায় আমরাও যেতে পারছি না। তাই মঙ্গলসিকদার বাজারের একটি টিনের ঘরে বসে ইউনিয়ন পরিষদের সকল কাজ করতে হয়। এখানে আমার কিছু করার নেই।
ধলীগৌরনগর ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু জানান, ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবনটি অনেকদূরে হওয়ায় সেখানে যাচ্ছি না। জনগণের যেখানে সুবিধা হচ্ছে আমি সেখানে বসছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনামিকা নজরুল বলেন, বিষয়টি জানার পর চেয়ারম্যানকে নবনির্মিত ভবনে কার্যক্রম চালাতে বলেছি। শিগগিরই যদি তিনি সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা না করেন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।